বাংলায় দেখুন

সুলতান সালাহউদ্দিনের জিবনী ও বাস্তব ইতিহাস

সুলতান সালাহউদ্দিনের জিবনী ও বাস্তব ইতিহাস

১১০০ সালের কথা। ক্রুসেডারদের তান্ডবে পুরো মুসলিম বিশ্ব ভয়ে থর থর করে কাঁপছে। মুসলমানরা হতাশ হয়ে পড়েছে। অনেক মুসলিম শাসক হতাশ হয়ে তাদের অনুগত্যও করে।  কিন্তু হতাশ হয়নি কিছু জানবাজ মুজাহিদ ও আল্লাহ প্রেমিক মানুষ। তাদের মধ্যে একজন কাঠমিস্ত্রীও ছিলেন। যিনি আশা হারাননি। তার আশা ছিলো একদিন ক্রুসেডাররা পরাজিত হবে। চারিদিকে আবারও শান্তির হাওয়া বইবে।

আবার মুসলিমরা ইনসাফের সাথে শাসন করবে এ জমিন।  এমনকি কাঠমিস্ত্রী বাদামী রংঙের একটি খুব সুন্দর মিনার তৈরী করেছিলো মসজিদে আক্বসার জন্য৷ তার আশা একদিন এ মিনার মসজিদে আক্বসায় স্হাপন করা হবে। বালক ইউসুফ তার বাবার সাথে মিনারটি দেখতে এলো। সে মনে মনে ওয়াদা করলো এ মিনার সে মসজিদে আক্বসায় একদিন স্হাপন করবেই। ইতিহাসে সেই বালককে সবাই মহান সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী নামে জানে। চলুন তাহলে আমরা জেনে নিই কাঠমিস্ত্রীর আশা কি পুর্ণ হয়েছিলো।  সেই মহান বালকের বা সেই মহান সুলতানের জিবনী সম্পর্কে জানি।

বংশ পরিচয় ও জন্ম: ইতিহাসের মহান ব্যক্তিদের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় তাদের অধিকাংশ অনারবী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে কিছু আরবী ঐতিহাসিকরা মহান ব্যক্তিদের বংশকে টেনে- হিঁচড়ে আরবদের বংশের সাথে মিলানোর চেষ্টা করে। সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর ব্যাপারে বিপরীত হয়নি। কিছু আরবী ঐতিহাসিক তার বংশ পরিচয় দিতে গিয়ে “আদনানের মুদার”  পর্যন্ত পৌঁছেছে। আসলে তারা প্রত্যেক মহান ব্যাক্তির বংশাধারাকে আরবদের সাথে সংযুক্ত করার চেষ্টা করতো। সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী ছিলেন কুর্দি বংশদ্ভূত।

টাইগ্রিস নদীর তীরবর্তী একটি সুপ্রাচীন  শহর তিরকিত।  দুর্গ রক্ষকের নাম নাজিমুদ্দিন আইয়ুব। আজ তাকে দুর্গ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এ অপরাধে যে, পাঁচবছর পূর্বে  সে নুরুদ্দিন জিনকিকে টাইগ্রিস নদী পার হতে সাহায্য করেছিলো। এবং তাকে তিরকিতে আশ্রয় দিয়েছিলো। 

নাজিমুদ্দিনের স্ত্রী ছিলো গর্ভবতী। সে তার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে রওনা দেয় বন্ধু নুরুদ্দিনের  নিকট আশ্রয়ের জন্য। কিন্তু পথেই তার স্ত্রী সন্তান জন্ম দেয়।  যার নাম রাখা হয়, ইউসুফ সালাউদ্দিন। যাকে আমরা সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী নামে জানি। নুরুদ্দিন জেনকি তাদেরকে আশ্রয় দেন। এবং নাজিমুদ্দিনকে বড় পদে আসীন করেন। নাজিমুদ্দিনের ভাই শিরকুহকে তার রাজ্যের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেন।


যে বছর সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী জন্ম গ্রহণ করেন। ঐ বছর আব্বাসি খলিফা আর- রাশেদ বিল্লাহ এবং সেলজুক সুলতান মাসউদের মাঝে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়।  ফলস্বরূপ খলিফা পলায়ন করে এবং পরে একলোক খলিফাকে হত্যাও করে।

   শিক্ষা- দীক্ষা ও বেড়ে উঠা: ৫৩২ হিজরি মোতাবেক ১১৩৮ সালে নুরুদ্দিন জেনকি বা’আল- বেক ( বালাবাক্কু) শহর জয় করেন।এবং তিনি শহরের দায়িত্ব  নাজিমুদ্দিনকে দেন। এর দ্বারা বুঝা যায় যে নাজিমুদ্দিন আইয়ুবীর প্রতি নুরুলদীন জেনজকির কতটুকু আস্হা ছিলো। সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর জীবনের শৈশব, কৈশোর এমনকি জীবনের অনেকটা অংশ বা’আল-বেক (বালাবাক্কু) শহরে অতিবাহিত হয়।

তিনি ফিকাহ ও সাহিত্যে  বিষেশ বুৎপত্তি অর্জন করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি অশ্বচালনা এবং যুদ্ধের কলাকৌশল রপ্ত করেন। তিনি জিহাদের প্রশিক্ষণ সহ রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবোস্হাপনার জ্ঞান অর্জন করেন। ৫৪৯  হিজরি মোতাবেক ১১৫৪  সালে নুরুলদীন জেনকি দামেস্ক জয় করে। তখন সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী তার ভাই সহ দামেস্ক চলে আসেন।  যেখানে তার শৌর্য-বীর্য পূর্ণতা পায়।

দামেস্কের শাসকের ছেলের মতোই মান- মর্যাদা পান তিনি। তাকে সেখানে পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দামেস্ক থাকাকালীন তিনি বীরোত্ব ও সামরিক দক্ষতার গুরুত্বপূর্ণ পাঠগুলো অর্জন করেন।  তার চাচা শিরকুহ মিশরের বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে সালাউদ্দিন আইয়ুবীকে সাথে নিয়ে যান।

যুদ্ধে তিনি অসাধারণ নৈপুণ্য দেখান।  ফলাফলে ৫৬৪ হিজরিতে মিশর জিনকি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। মোট কথা সালাউদ্দিন আইয়ুবীর শৈশবে মহান গুণাবলি অর্জন ও দ্বীনদারি নিয়ে বেড়ে উঠেন। এবং যৌবনে সেটার পূর্ণতা পেতে থাকে। বড় বড় ব্যক্তিদের সাথে উঠা-বসা করার সুযোগ হতো। এভাবেই আস্তে আস্তে ইতিহাসের গতিপথ পাল্টাতে থাকে।

   আইয়ুবী সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন: ৫৬৪ সালে মিশর বিজয় হওয়ার পর আসাদুদ্দিন সিরকুহ মিশরের মসনদে বসে। কিন্তু দু’মাস পরেই ৫৬৪ হিজরি মোতাবেক ১১৬৯ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। সালাউদ্দিন আইয়ুবী তিন দিন চাচার শোক পালন করেন। ফাতেমী খলিফা আল-আদিদ তাকে তার উজির বানিয়ে আল-মালিক আন-নাসির উপাধিতে ধন্য করেন। অথচ ঐ সময় তার চেয়ে বয়সে অভিজ্ঞতায়  বড় বড় অনেক জেনারেল ছিলেন। কিন্তু আল-আদিদ সালাউদ্দিনকে  দায়িত্ব দেন। 

ঐতিহাসিকদের মতে সালাউদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়ার কারণ হলো সে বয়সে অল্প তাই, তাকে হুকুমের গোলাম বানানো যাবে। কিন্তু ততদিনেতো সালাউদ্দিন তার চাচা আসাদুদ্দিন ও নুরুদ্দিন জেনকির সাহচর্যে থেকে বেশ অভিজ্ঞ হয়ে গেছেন। তিনি বিভিন্ন সংস্কারমুলক কাজ করেন। জনগণকে হাত খুলে দান করেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্নধরনের ক্ষেত্রে জনগণের পক্ষ নেন। তাই জনগণও তাকে আপন করে নেয়।

৫৬৭ হিজরি মোতাবেক ১১৭২ সালে যখন আল-আদিদ মৃত্যু বরণ করে তখন সালাউদ্দিন তার মসনদে সহজেই বসে যায়। এভাবেই ফাতেমী খেলাফতের সমাপ্তি ঘটে। আর আইয়ুবী সাম্রাজ্যের সূচনা হয়।  তিনি জুমার খুতবায় আব্বাসী খলিফা আল-মুসতাদিরের নামে দোয়া করতে বলেন।

   ক্রুসেডারদে বিরুদ্ধে যুদ্ধসমূহ: ক্রুসেড কী?? শাইখ আব্দুল্লাহ নাসিহ উলওয়ান (রহঃ) বলেন, ক্রুসেড হলো দুই শতাব্দী ধরে ইউরোপ কর্তৃক পরিচালিত সামরিক অভিযান।  এর উদ্দেশ্য ছিলো মুসলিমদের হাত থেকে জেরুজালেম ছিনিয়ে নেওয়া এবং মুসলমানদের বিজয়ধারার গতিরোধ করা।

১০৯৮ সাল থেকে নিয়ে ১১০৮ সাল পর্যন্ত তারা আন্তাকিয়া,তারসুস,ফুরাতের পাশের শহর উরফা এবং ত্রিপলি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা তারা দখল করে ফেলে।  সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী বিভিন্ন মুসলিম নেতাদের একত্রিত করেন ক্রুসেডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। আমরা এখানে শুধু গুরুত্বপূর্ণ দুটি যুদ্ধের কথা উল্লেখ করবো।

  হিত্তিনের যুদ্ধ: ৫৮২ হিজরি মোতাবেক ১১৮৭ সালে কেরাকের “রেজিনাল্ড শ্যাটিলন”  হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া কিছু হজ্ব কাফেলার উপর আক্রমণ করে।  তাদের সম্পদ লুট করে তাদের অনেককে  হত্যা করে এবং বাকিদের বন্দি করে । অথচ তাদের সাথে শান্তি চুক্তি ছিলো। ঐতিহাসিকদের মতে রাজা “রেজিনাল্ড শ্যাটিলন” ছিলো চরম মুসলিম বিদ্বেষি।

সে হাজ্বি মুসলিমদের কটাক্ষ করে বলতে থাকে যে, ‘তোদের মুহাম্মদকে ডাক দেখি সে তোদের বাচায় কিনা’?( নাউজুবিল্লাহ) ।  এঘটনা সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী শুনার পর তিনি রাগে ফেটে পড়েন। বিশেষ করে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর অবমাননার কারণে। তিনি তার সেনাবাহিনী নিয়ে রওনা দেন রেজিনাল্ডের বিরুদ্ধে। ক্রুসেডাররা আগমনের খবর শুনে রাস্তায় পানির উৎসগুলো নস্ট করার চেষ্টা করে যাতে মুসলিম সৈন্যরা পানির অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়ে। কিন্তু সালাউদ্দিন তার আগেই নদীর কিনারে এসে তাদের উপর হামলা করে।

  ক্রুসেডাররা দিশেহারা হয়ে হিত্তিনের কিনারে গিয়ে উপস্থিত হয়। ক্রুসেডারদের পক্ষে ছিলো জেরুজালেমের গভর্নর, সুর,আক্কা,নাসেরাহ ও কেরাকের গভর্নরগণ। ক্রুসেডারদের ২০ হাজার অশ্বারোহী ১৩ হাজার ব্যাটলিয়ন এবং ৭ হাজার সামরিক সহযোগি যোদ্ধা ছিলো।  সব মিলিয়ে মোট ৪০ হাজার সৈনিক।  অপরদিকে সালাউদ্দিনের ছিলো মাত্র ১২ হাজার সৈনিক এবং কয়েকটি সেচ্ছাসেবী বাহিনি।


শুক্রবার জুমার পর যুদ্ধ শুরু হয়। মুসলমানরা মসজিদে তাদের জন্য দোয়া করতে থাকে। ৫৮৩ হিজরি রবিউস সানী মাসে (৩-৪জুলাই ১১৮৭ সালে) এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের বিজয় দান করেন। ঐতিহাসিকদের মতে এ যুদ্ধে ১০  হাজার খ্রিস্টান সৈন্য নিহত হয়। এবং হাজার হাজার সৈনিক বন্দি হয়৷  জেরুজালেমের গভর্নর এবং কেরাকের গভর্নর ও বন্দী হয়। সালাউদ্দিন জেরুজালেমের গভর্নরকে মুক্তি দেন। কিন্ত রেজিনাল্ডকে হত্যা করেন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালিগালাজ করার কারণে। এভাবেই ক্রুসেডারদের মনোবল ভেঙে পড়ে। 

   বাইতুল মাকদিস বিজয়: ক্রুসেডের ভয় সমাপ্তকারী হিত্তিনের যুদ্ধের পর সালাউদ্দিন আইয়ুবী তার সেনাবাহিনী নিয়ে বৈরুত,আক্কা,সিডন,নাবলুস এবং রামলা জয় করেন। এরপর জেরুজালেমের  চারিদিক থেকে বন্দী করে কঠিন এক অবরোধ করেন সালাউদ্দিন আইয়ুবী।  কিন্তু ফ্রাংকাররা একগুঁয়ে, তারা আত্মসমর্পণ করতে চায়নি।নকিন্তু এক সপ্তাহ অবরোধের পর তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়।

তিনি বিনা বাধায় জেরুজালেমে প্রবেশ করেন। তাদেরকে শর্ত দেওয়া হয়  চল্লিশ দিনের ভিতর মুক্তিপণ দিয়ে জেরুজালেম শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে। ৫৮৩ হিজরির ২৭ শে রজব ক্রুসেডাররা জেরুজালেম সম্পুর্ণরূপে ত্যাগ করে চলে যায়।  প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিকদের মত হলে এ তারিখেই নাকি রাসূল সাঃ এর মিরাজ সংগঠিত হয়েছিলো। দীর্ঘ ৮৮ বছর পর আবারো মুসলিমদের হাতে আসে। সেই ছোট্ট বালকের ওয়াদা পূর্ণ হয় এবং কাঠমিস্ত্রীর আশাও পূর্ণ হয়। আবারো মসজিদে আক্বসায় মুয়াজ্জিনের আযান ধ্বনিত হলো: “আল্লাহু আকবার”  ” আল্লাহু আকবার “।

 ঐতিহাসিক রামাল্লা চুক্তি: ব্রিটেনের রাজা “রিচার্ড রেগুলাস” বুঝতে পারে মুসলমানদের যুদ্ধ করে পরাজিত করা সম্ভব নয়। কারণ তারা  প্রতিশোধ নিতে নয় বরং আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করে। তাই সে সালাউদ্দিন আইয়ুবীর নিকট চুক্তি করার আবেদন করে। বিনিময়ে সে তার বোনকে সুলতান সালাউদ্দিনের ভাই আল আদেলের সাথে বিবাহ দিবে। কিন্তু সালাউদ্দিন আইয়ুবী তা প্রত্যাখ্যান করেন।

সুলতানের মানসা চিন্তা ছিলো যুদ্ধ করার।  যদি চুক্তি করে তাহলে ক্রুসেডাররা পরবর্তীতে একত্রিত হয়ে আবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।  তাই তিনি চেয়েছিলেন যুদ্ধ করে ক্রুসেডারদের সব ভূখণ্ড বিজয় করতে।  কিন্তু সৈন্যরা ভিষণ অবাধ্য হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে রাজা রিচার্ড আবার চুক্তির আবেদন করলে সুলতান সালাউদ্দিন তা মেনে নেন। চুক্তির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত থাকে যে, ফিরিঙ্গি ও যে কোনো খ্রিস্টান জেরুজালেম যিয়ারতের জন্য আসতে পারবে।

সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর উন্নয়নমূুলক কর্মকাণ্ড: নির্মাণ সংস্কারে:- তিনি কায়রোর প্রাচীর পুনঃনির্মাণ করে। শহরের নিরাপত্তা বাড়াতে তিনি পাহাড়ি কেল্লা নির্মাণ করেন।  সুয়েজ শহরের উত্তর- পূর্বে সিনাই শহরে সিনাই কেল্লা নির্মাণ করেন।  তার পাশে দুটি মসজিদ নির্মাণ করেন।  এবং পানির প্রয়োজনীয়তার কারণে তিনি  বিভিন্ন জায়গায় খাল নির্মাণ করেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিক ইত্যাদি নির্মাণ করেন।  এমনকি তিনি আল মুইযের একটি প্রাসাদ দখল করে সেটাকে পাগলা গারদ বানান।


শিক্ষা সংস্কার :- তিনি শিক্ষা সংস্কারে অনেক অবদান রাখেন৷  তিনি সব মাযহাবদের জন্য আলাদা মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। তিনি নিজে ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের। কিন্তু সব মাযহাবের শিক্ষক রাখেন। শাফেয়ী মাযহাবীদের জন্য আস সালিহিয়া মাদ্রাসা নির্মাণ করেন।  তিনি বিভিন্ন বিদ্যাপীঠ স্হাপন করে, কবি, সাহিত্যিক,গবেষক, মৌলভী, এবং দক্ষ শাইখদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এছাড়াও সামাজিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, এবং ধর্মীয় সংস্কার করেন।

  সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর চারিত্রিক গুণাবলি: মুসলমানদের নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দ্বীনদারি৷ সালাউদ্দিন আইয়ুবী  বাআলবেক শহরে থাকা অবস্থায়ই তার উত্তম চরিত্রে ও দ্বীনদারির  কারণে সবার নিকট প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি শাইখদের সাহচর্যে থাকতেন। তিনি ছিলেন দয়ালু ও মহানুভব। খ্রিস্টানরা জেরুজালেম ছাড়ার সময় অনেক মহিলা তার নিকট আবেদন করেছিলো আমাদের পিতা, ভাই, স্বামীদের মুক্তি দিন তাদপর ছাড়া আমরা কিভাবে থাকবো।

সালাউদ্দিন আইয়ুবী তাদের মুক্তি দিয়ে দেন। অনেক  খ্রিস্টানকে তিনি যাওয়ার জন্য সওয়ারীর ব্যবস্হা করে দেন। তিনি দানশীল ছিলেন। দু’হাত খুলে দান করতেন।  তিনি ছিলেন ক্ষমাপরায়ণ, সাহসী, মোট কথা একজন যোগ্য শসক হওয়ার সবগুলি গুণাবলি তার ছিলো।

 সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর ইন্তেকাল: ৫৮৯ হিজরিতে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী হজ্ব করার ইচ্ছা করেন। কিন্তু তার ভাগ্যে ছিলোনা। যেদিন তিনি ইচ্ছাটি ব্যক্ত করেন সেদিনই তিনি পীতজ্বরে আক্রান্ত হন। দিন দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। অবশেষে ৫৮৯ হিজরি মোতাবেক ১১৯৩ সালে পঞ্চান্ন বছর বয়সে এই মহান বীর ইহজগত ত্যাগ করেন।(ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিইন)।  দামেশকের গ্রেট মসজিদের পাশে ইতিহাসের এই মহান বীরকে সমাধিস্থ করা হয়। আরো ইতিহাস এবং জিবনী পড়ুন

Support us

-লেখক: যায়েদ হাসান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button